আর্কাইভ | ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ শা‍ওয়াল ১৪৪৬ ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১২ এপ্রিল ২০২৫
০৯:২৮:৪৪ পূর্বাহ্ন

ফ্যাসিস্ট মোটিফ পোড়ালো কারা? 


‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ উপলক্ষে বানানো ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফটি পোড়ানোর ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়।

শনিবার (১২ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল ও সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী। সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতীকী মোটিফ বানান। অন্যান্য মোটিফের সঙ্গে প্রতীকী দানবীয় ফ্যাসিস্টের মোটিফটিও বানানো হয়।

অনুষদের দক্ষিণ পাশের গেট–সংলগ্ন জায়গায় প্যান্ডেলের ভেতরে এই মোটিফগুলো রাখা হয়। কে বা কারা এর মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফটি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় শান্তির পায়রা মোটিফটিও আংশিক পুড়ে গেছে।

হাসিনার দোসররা ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে: ফারুকী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য নির্মিত দুটি প্রতীকী মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়েছে শেখ হাসিনার দানবীয় ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতির প্রতিকৃতি এবং শান্তির প্রতীক একটি পায়রার মোটিফ। 


ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করেন সাংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। 

বিচারক সংকট থাকবে না: আইন উপদেষ্টাবিচারক সংকট থাকবে না: আইন উপদেষ্টা
তিনি লিখেছেন, ‘হাসিনার দোসররা গতকাল ভোররাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে—সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক—তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আসতে হবে, দ্রুত।’

পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এই শোভাযাত্রা থামানোর চেষ্টায় আওয়ামী লীগের হয়ে যারা কাজ করছে, আমরা শুধু তাদেরকে আইনের আওতায় আনবো তা না, আমরা নিশ্চিত করতে চাই এবারের শোভাযাত্রা যেনো আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়।’

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ফারুকী লেখেন, ‘কালকে রাতের ঘটনার পর হাসিনার দোসররা জানিয়ে দিয়ে গেলো বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে উৎসব করুক তারা এটা চায় না। আমরা এখন আরও বেশি ডিটারমাইনড, এবং আরও বেশি সংখ্যায় অংশ নিবো। গত কিছুদিন জুলাই আন্দোলনের পক্ষের অনেকেই বলেছিলেন, এবারের শোভাযাত্রা সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভিন্ন রকমের হচ্ছে। এখানে ফ্যাসিবাদের ঐ বিকট মুখ না রাখাই ভালো। আমরাও সব রকম মত নিয়েই ভাবছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মত জানার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কালকের ঘটনার পর এই দানবের উপস্থিতি আরও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো।’


প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতির পাশাপাশি ‘শান্তির পায়রা’ প্রতীকটিও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কে বা কারা এই আগুন লাগিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চারুকলার সাবেক এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ‘নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছিল। এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা এখনও চারুকলার সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্য থেকে কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রক্টর ও ডিন অফিসের মধ্যে বৈঠকের পর ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) অতিরিক্ত কমিশনার এস এম মো. নজরুল ইসলাম ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টার কিছু আগে এ ঘটনা ঘটেছে। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত করলে বিস্তারিত জানতে পারব।’


প্রসঙ্গত, বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা হয় প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার একটি দৈত্যাকৃতির ‘ফ্যাসিবাদী প্রতিকৃতি’। বাঁশ ও বেতের কারুকাজে তৈরি এই মোটিফে শেখ হাসিনার মুখাবয়বের দুপাশে ছিল শিংয়ের মতো অবয়ব। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি ছিল এবারের শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ।